সংকটে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪ ১৮:২০ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে ১২ বার।

অবাধে বৃক্ষ নিধন,দফায় দফায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে নওগাঁর আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান। খামখেয়ালী আচরনে উজাড় হচ্ছে বন। বিলুপ্ত হচ্ছে বনের সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণী। সম্প্রতি আলতা দীঘির পুনঃখনন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয় পরিবেশবীদদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্ঠি হয়েছে। এদিকে শুধু পরিবেশবীদই নয়,সামাজিক বনানয়নের অংশীজনরাও এ জন্য খোদ বন বিভাগকেই দায়ি করছেন। 


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে প্রাণ জুড়ায় আলতাদীঘি শালবন। বড়-বড় গাছ, লতাগুল্ম, পাখির ডাক আর উই পোকার ঢিভি ভীষন ভাবে আকৃষ্ট করে। ২০১১ সালে এই বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করা হয়।
কিন্তু অল্প দিনেই ভয়ানক সংকট তৈরী হয়েছে বনে। অবাধে গাছ নিধন,মরে যাচ্ছে গাছ, সরু মাটির, পথ পাকা করায় গহীন বনেও অবাধে ঢুকছে মানুষ ও যানবাহন। হারিয়ে যাচ্ছে বন্য প্রানী।
গত বছর  নভেম্বর মাসে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থয়ানে আলতাদিঘীর জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ কোটি ৩৯ টাকা ব্যয়ে এবং সামাজিক বন বিভাগ রাজশাহীর তত্ত্বাবধানে দীঘির পুনঃখনন কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে দিঘির চারিপাশ পাড় উঁচু ও প্রশস্ত করে সাড়ে ৪ ফিট গভীরতা করে 
দীঘির খনন কাজ শুরু করা হয়। এ সময় দিঘির চারিপাশের কয়েক হাজার গাছ অবাধে কেটে ফেলা হয়।

 
প্রাকৃতিক শালবন। তাই অপরিকল্প প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে যাচ্ছে তাই হচ্ছে। এরমধ্যেই আগুনে পুড়ে গেছে কয়েক বার। এমন অবস্থার জন্য ক্ষুব্ধ অংশীজনেরা।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। Dr MR Karim Reza নামে আইডি হতে আলতাদীঘির উন্নয়নের নামে অবাধে বৃক্ষ নিধনে ক্ষোভ  প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি

তার আইডিতে লেখেন 
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই জাতীয় উদ্যান গড়ে উঠেছে প্রায় ১.১ কিমি দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রস্থের ৪৩ একর আয়তনের এক বিশাল দীঘিকে কেন্দ্র করে, যা আলতাদীঘি নামে পরিচিত। শালবন ও নানা ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে উদ্যানের বনভূমিতে। মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল, শিয়াল, অজগর, বানরসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী পোকামাকড় রয়েছে উদ্যানে। 
সংস্কারের নামে এই দীঘির আশেপাশে ১ কিমি অংশের সব ধরনের কেটে ফেলা হয়েছে!


একই আইডিতে অসংখ্য মানুষ মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে নাছির মাহমুদ শাওন নামে এক ব্যক্তি  মন্তব্য করেন--
গরম জীবনেও কমবে না,,যতই এসি, আইপিএস লাগাইনা কেন,,প্রকৃতি কে হত্যা করে চরম ভূল করছি আমরা তার ফল ভোগ করতে হবে,, আপনি যত বড় কোটিপতি হন না কেন,, যত বড় শহরে বসবাস করেন না কেন প্রতিশোদ সে নিবেই,,উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার শহরগুলোর টর্নেডো,, দাবানল,,,বিভিন্ন দেশের ভূমিকম্প এবং রিসেন্টলি দুবাই শহরের বন্যা জলাবদ্ধতা তার প্রমান,,,তাই বলবো গাছ, প্রকৃতি, বন্যপ্রানিদের ভালোবাসতে হবে।


এস কে সাহিন বলেন,এখন এইখানে বিশাল অট্রালিকা তৈরি করা হবে। ব্যাবসার জন্য কয়েকটা হোটেল আর ফুসকা চটপটির দোকানের হাট বসানো হবে। মানুষকে বলা হবে এটা একটা প্রাকৃতিক সম্পদ। সেই ইনকাম হবে।


মোসাঃ ফাতেমা তুজ জোহরা নামে এক গৃহবধ মন্তব্য করেছেন,কিছুদিন আগে গেছিলাম। ভেবেছিলাম দীঘিতে অনেক পানি থাকবে। কিন্তু খড়া পড়া খোলা মাঠ ছাড়া কিছু পাইনি। জায়গার আসে পাশের গাছপালা কেটে জায়গাটার সৌন্দর্যই শেষ। আর হয়ত যাব না।


ফয়সাল কবির মন্তব্য বলেন,দেশের অধিকাংশ মানুষকে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা মূলত গাছ কাটছে না তারা আমাদের গলা কাটছে। আমাদের জৈব ইকোসিস্টেম ধ্বংস করছে। ইকো সিস্টেমের কোন একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেলে পুরো সিস্টেম  আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ে। সারা বাংলাদেশে গাছ কাটার এক মহা উৎসব লাগিয়েছে এই সরকার।

তারা বলছেন- অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরুপ প্রভাব পরেছে শালবনে। এভাবে বন উজাড় হলে নেমে আসবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তাই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ করেছেন তারা। 
প্রকৃতির সাথে যে বিরুপ আচরণ করা হয়েছে তার ফল এখন হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করা হচ্ছে। বৈষ্যিক উষ্ণতা বাড়ছে। দিন দিন পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে চলেছে। হিট স্ট্রোকে আকান্ত হচ্ছে মানুষ -জীবজন্তু । এর প্রভাব পড়েছে জনজীবনে।


এদিকে আলতা দীঘির উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনাঞ্চলটি রক্ষাসহ নওগাঁর নদী খাল বিল দখল দূষণ,পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষার দাবিতে গত ২৬ এপ্রিল শহরের মুক্তির মোড়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), গ্রীণ ভয়েজ ও একুশের পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে  মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।

 
বাপার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন- আলতাদীঘি শালবনে গত এক বছর  ৮বার আগুন লেগেছে। উন্নয়নের নামে প্রায় ৩ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কিভাবে আগুন লেগেছে বা লাগানো হয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য আমরা জানিনা। এগুলো তদন্ত করা প্রয়োজন।


নওগাঁ জেলা বাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন- আজ প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব পড়েছে। যা আমাদেরই সৃষ্টি। যেসব প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উটেছে তা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতিগুলোকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। শুধু মানববন্ধন করলেই হবে না তা বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় যতদুর যাওয়ার দরকার হবে আমরা যেতে চাই।


একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ও পরিবেশবীদ অ্যাডভোকেট ডি.এম আব্দুল বারী বলেন- উন্নয়নের মানে জাতীয় উদ্যান আলতা দিঘীর অবাধে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে,বিকল্প চিন্তাধারা করতে হবে। 


এদিকে জাতীয় উদ্যান আলতা দিঘীর সামাজিক বনায়নের উপর নির্ভরশীল অংশী জনদের মধ্যে আব্বাস মন্ডল, নুর ইসলাম,খয়বর আলী,আসমা বেওয়া ও জহুরা বিবি অভিযোগ করে বলেন অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ড চালানোর কারণে আজ নয়নাভিরাম আলতাদীঘির সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। 


 অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা স্বীকার করেন ধামুইরহাটের বনবিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, বন বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ গোলাম মওলা,  বলেন বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।