চাঁদা না পেলে মাছ ছিনতাই করেন ছাত্রলীগ নেতা!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১ ১৮:১০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৭ বার।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় চাঁদা না পেয়ে জেলেদের মাছ ছিনতাই করার অভিযোগ পাওয়া গেছে জিয়াউর রহমান (৩৩) নামে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ সময় বাধা দিতে গেলে মতিয়ার রহমান (৪৮) নামে এক ইউপি সদস্যকে মারধর করে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত ওই ইউপি সদস্য বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।

 

এ ঘটনায় ১৯ এপ্রিল রাতে ভুক্তভোগী জেলে রহমত আলী বাদী হয়ে জিয়াকে প্রধান আসামি করে আরও একজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

 

 

এর আগে শনিবার দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের তিস্তা নদীতে এ ঘটনাটি ঘটে।   

অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান উপজেলার দোয়ানী পিত্তিফাটা এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে। এছাড়া সে উপজেলা ছাত্রলীগের দোয়ানী ইউনিটের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি। তবে সে ছাত্রলীগের কেউ নন বলে দাবি করেন হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি।

 

 

ইউপি সদস্য দোয়ানী পিত্তি ফাটা এলাকার ডা. মো: দবির উদ্দিনের ছেলে এবং উপজেলার গড্ডিমারী ইউপির ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য। ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী জেলে রহমত আলী উপজেলার দোয়ানী পিত্তিফাটা এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত পাহালি পরামানিকের ছেলে এবং তিনি দোয়া তিস্তা ব্যারাজ মৎসজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি।

 

থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় অসহায় গরীব ২২ জন জেলেদের নিয়ে গঠিত দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ মৎসজীবী সমবায় সমিতি। সেই সমিতির সভাপতি জেলে রহমত আলীর নেতৃত্বে ব্যারাজের পিছনের তিস্তা নদী থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন সমিতির সকলে।

 

 

প্রায় বছর দুয়েক আগ থেকে চাঁদার জন্য জেলেদের নদী থেকে মাছ ধরতে বাধা দিয়ে আসছেন জিয়া গং। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার চাঁদার টাকা না পেয়ে ঝামেলা করে জোর পূর্বক ২-৩ কেজি বৈরালী মাছ নিয়ে চলে যায়। টাকাতো দেননা উল্টো ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন তিনি।

গত ১৯ এপ্রিল জেলেরা তিস্তা ব্যারাজ এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের তিস্তা নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরছিলো। এ সময় জিয়াসহ কয়েকজন সেখানে গিয়ে মাছ ধরতে বাধা দেন।

 

যদি দশ হাজার টাকা না দেয় তাহলে মাছ ধরতে পারবে না বলে জানান। এতে রহমত আলীসহ অন্যান্যরা চাঁদা দিকে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এতে জিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে জেলেদের ধরা ৮শত টাকা মূল্যের বৈরালী মাছ জোরপূর্বক নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে এতে বাধা দেন রহমত। ফলে জিয়া গং রহমের উপর হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে।

এ সময় গড্ডিমারী ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান ছুটে এসে রহমতকে রক্ষা করে জিয়াকে চলে যেতে বলে। কিন্ত জিয়া চলে না গিয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ইউপি সদস্যের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান।   

 

এ বিষয়ে উপজেলার দোয়ানী ইউনিট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, ওরা নিজেরাই চলতে পারে না। কোন রকম মাছ ধরে দিন পার করে। ওরা দশ হাজার টাকা কই পাইবে। আমি তাদের কাছে কোন চাঁদা দাবি করিনি। এটা সম্পূর্ন মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন।

 

এ বিষয়ে আহত ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, ওই জিয়া প্রায় জেলেদের উপর অবিচার করে। জেলেরা অনেক কষ্টে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা দশ হাজার টাকা কই পাবে। উল্টো টাকা ছাড়া মাছ নিয়ে যায়। বাধা দেয়ায় রহমতকে মারধর করে। আমিও বাধা দিতে গিয়ে জিয়ার মারধরের স্বীকার হই। আমি জিয়ার বিচার চাই।

 

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম শাহরিয়ার জিহান বলেন, জিয়া বর্তমান ছাত্রলীগের কেউ না। দোয়ানী শাখা ছাত্রলীগের কমিটির সাবেক সভাপতি। এখন ছাত্রলীগের কোনো পদে বা কমিটিতেই নেই। সে সম্ভবত যুবলীগের রাজনীতি করে।

 

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি,  তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।