গত বছর সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তা মিলেছিল অনেক

লকডাউনে বগুড়ায় কর্মহীন দেড় লাখ  মানুষের পাশে এখনও কেউ দাঁড়ায়নি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৭:২৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪০৩ বার।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত লকডাউনে বগুড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজনদের ভাগ্যে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোন খাদ্য কিংবা আর্থিক সহায়তা জোটেনি। এতে পরিবহন শ্রমিকসহ জেলার বিভিন্ন পেশার দিন আনা দিন খাওয়া অন্তত দেড় লাখ মানুষ মানুষ চরম সংকটে পড়েছেন।


সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে গত বছর করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই বগুড়ায় কর্মহীন এবং নি¤œ আয়ের লোকজনদের মাঝে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ এবং খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তার কয়েকদিন পর শুরু হওয়া রমজান মাসেও বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত ৫ এপ্রিল থেকে প্রথমে যানবাহন বন্ধ এবং ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ রমজানের প্রথম দিন থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে সরকারি-বেসরকারি কোন সহায়তাই মেলেনি। ফলে পরিবহন ও নির্মাণ শ্রমিকসহ দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলো রীতিমত চোখে অন্ধকার দেখছেন। 
২০২০ সালের এপ্রিলে করোনা সংক্রমণের শুরুতে বগুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানা হয়েছিল, জেলায় পেশাভিত্তিক খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে ৪০ হাজারই গৃহনির্মাণ শ্রমিক। বাস ও ট্রাকে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৩৬ হাজার। এছাড়া ইটভাটায় কাজ করেন ৩০ হাজার শ্রমিক, ১৫ হাজার রিকশা-ভ্যান চালক,  হোটেল ও বেকারিতে কর্মরত ১০ হাজার শ্রমিক, ৭হাজার অটো চালক এবং আরও ২ হাজার সেলুন শ্রমিক রয়েছেন।


জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর করোনার সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটির সময় এপ্রিল মাস জুড়ে জেলার ১ লাখ ৬৩ হাজার পরিবারকে চাল, ডাল, আটা, শিশু খাদ্য এবং নগদ টাকাসহ নানাভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এমনকি নি¤œ মধ্যবিত্ত অনেক পরিবার থেকে যারা খাদ্য সহায়তা চেয়ে ৩৩৩-এ ফোন করেছিলেন তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বগুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে নিম্ন আয়ের লোকজনদের সহায়তা করা হয়। এছাড়া বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ-এর পক্ষ থেকে ১০ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেশ জেলায় কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল মেশিনারী মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ (বামমা) আরও অনেক ব্যবসায়ী সংগঠন। এমনকি বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং ‘আলোকিত ফেসবুক’ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধুদের নিয়ে গড়া সংগঠনের পক্ষ থেকেও সহায়তা করা হয়েছিল। 


কিন্তু এবার সরকারিভাবে যেমন এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হয়নি তেমনি বিভিন্ন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আগের মত সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, গত বছর যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্মহীনদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন করোনার কারণে তারাই এবার ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে কারণে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও তারা আগের মত সাড়া দিতে পারছেন না।


অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, কর্মহীন পরিবারের কেউ কেউ আগের সঞ্চয় করা অর্থ দিয়ে কোন রকমে চলতে পারলেও যাদের যাদের ঘরে কোন টাকা নেই তারা ঋণ করে দিনাতিপাত করছেন। শহরের খান্দার এলাকার পরিবহন শ্রমিক নুরুল ইসলাম জানান, গত ৫ এপ্রিল থেকে তিনিসহ বগুড়ায় বিভিন্ন বাস-মিনিবাসে চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারসহ বিভিন্ন টিকিট কাউন্টারের কর্মরত প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে বসে আছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর করোনার শুরুতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর পরই সরকারি- বেসরকারি অনেক সাহায্য আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার ১২দিন পার হয়ে গেলেও এক কেজি চাল কিংবা একটি টাকাও কেউ সহায়তা করেনি।’ 


বাদল হোসেন নামে অপর শ্রমিক তার কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, ‘ঘরে যেটুকু সঞ্চয় ছিল সেটা দিয়ে আর হয়তো দুদিন চলবে তারপর কোন সহায়তা না পেলে হয় ঋণ করতে হবে নয়তো না খেয়েই রোজা করতে হবে।’ নির্মাণ শ্রমিক আলতাফ হোসেন বলেন, লকডাউনের কারণে কোন কাজ পাচ্ছি না। যে কারণে স্ত্রী ও ছেলে- মেয়েসহ ৪জনের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে রয়েছি। গতবার বিভিন্ন স্থান থেকে সহায়তা পেয়েছিলাম কিন্তু এবার কেউ আসেনি।’
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন জানান, করোনার কারণে জেলার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তার পরেও তো কর্মহীন মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই আমরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিব।’


বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক জানান, এখন পর্যন্ত ত্রাণ তৎপরতা চালানোর কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। অবশ্য কর্মহীনদের জন্য ৫০০ টাকা করে সহায়তা করার একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে। গত বছর বগুড়ায় সরকারিভাবে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালানোর কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘যদি লকডাউন দীর্ঘায়িত হয় তাহলে হয়তো এবারও সেভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হবে।’